ইতিহাস

 

কলেজের ইতিকথা

১৯৪৭। অবিভক্ত ভারতে বৃটিশরাজের বিদায়ধ্বনি বাজছে। অবিভক্ত বাংলার প্রাক্তন মন্ত্রী মৌলভী শামসউদ্দিন আহমদ (জন্ম : ১৮৮৯ – মৃত্যু : ১৯৬৯) স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত পদ্মা-গড়াই বিধৌত সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের জনপদ এই কুষ্টিয়া। এই জনপদ ইতিহাসখ্যাত অসংখ্য গুণীজনের  পদভারে ধন্য হয়েছে- বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাউল সম্রাট লালন শাহ, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, ওহাবী আন্দোলনের কাজী মিয়াজান, বস্ত্র শিল্পের অগ্রদূত মোহিনী মোহন চক্রবর্তী, কবি আজিজুর রহমান, সাহিত্যিক আকবর হোসেন, সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, গগন হরকরা প্রমুখ এ কুষ্টিয়ার বুকে তাদের কীর্তির স্বাক্ষর রেখে গেছেন।

এ জনপদে এমন কিছু পুরাকীর্তি রয়েছে যা দেশ-বিদেশের হাজারো ভ্রমণ পিয়াসু মানুষকে কুষ্টিয়ায় ভ্রমণ করতে আকৃষ্ট করে। এর মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, লালন শাহ মাজার, ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রভৃতি। শিল্পপতি আলহাজ¦ মোঃ মজিবর রহমান সাহেবের প্রতিষ্ঠিত বি.আর.বি গ্রুপ দেশের শিল্পোন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে চলেছে।

কলেজটি দেশের প্রথম শ্রেণির ৩০টি কলেজের অন্যতম। বর্তমানে এখানে ২০টি বিষয়ে স্নাতক এবং ১৭ টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। এছাড়া যশোর বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (পাস) কোর্স পড়বার সুযোগ রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই হাজারসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে বিশ হাজার এর অধিক ছাত্র-ছাত্রী এখানে অধ্যয়ন করছে। বাংলাদেশ কর্ম কমিশন থেকে মনোনীত মেধাবী, চৌকস ও প্রাজ্ঞ ১২৬ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক কর্মরত। কলেজ অফিসের কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে ১২৬ জন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী।

একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপক সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য ফরেন ল্যাংগুয়েজ টিচিং ক্লাব, বাংলা ও ইংরেজি ডিবেটিং ক্লাব, আবৃত্তি অনুশীলনের জন্য কবিতা আবৃত্তি পরিষদ ‘নির্ঝর’, বিজ্ঞান ক্লাব ও সঙ্গীত বিভাগ রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে বিএনসিসি, রোভার, রেঞ্জার, রেড ক্রিসেন্ট, রক্তদান সংগঠন ‘বাঁধন’। শারীরিক সক্ষমতা উন্নয়নে কলেজে রয়েছে প্রশস্ত খেলার মাঠ।

সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে কলেজে সকল জাতীয় দিবস অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উদ্যাপিত হয়। প্রতি বছর জাকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাঃ) ও সরস্বতী পূজা ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে কলেজে পালিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরতে কলেজ পাঠাগারে স্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। এছাড়া নিয়মিতভাবে কলেজ থেকে প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক মানের কলেজ জার্নাল।

মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ বিরাট অবদান রাখবে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী নতুন পরিবেশে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেছেন এই কলেজের এক সময়ের বিজ্ঞান বিভাগের কৃতী ছাত্র এবং কুষ্টিয়া শহরের সুসন্তান ও কৃতী শিক্ষক প্রফেসর মোল্লা মোঃ রুহুল আমীন। তাঁর নেতৃত্বে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজটি ছাত্র-জনতার গণআকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম হবে ইনশা-আল্লাহ।